মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ১২:৫১ অপরাহ্ন

রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলো যাচ্ছে বিদেশীদের কাছে

রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলো যাচ্ছে বিদেশীদের কাছে

স্বদেশ ডেস্ক:

লোকসানে জর্জরিত রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলো বিদেশী বিনিয়োগকারীদের কাছে ছেড়ে দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে দু’টি দেশের বিনিয়োগকারী এ খাতে বিনিয়োগের প্রস্তাবও দিয়েছে। বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৬৫ কোটি ডলার। তবে এক্ষেত্রে শর্ত দেয়া হয়েছে, বাংলাদেশ সরকারকে এই বিনিয়োগের ‘সভরেন’ গ্যারান্টার হতে হবে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এক্ষেত্রে সরকার নয়, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো গ্যারান্টার হতে পারে। শিল্প ও অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। প্রসঙ্গত চিনিকলগুলোর কাছে সরকারি বিভিন্ন ব্যাংকের ঋণ রয়েছে প্রায় আট হাজার কোটি টাকা।

জানা গেছে, রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলোর আধুনিকায়ন, উৎপাদন বৃদ্ধি এবং লাভজনক হিসেবে গড়ে তুলতে যৌথ ব্যবস্থাপনা দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন’ (বিএসএফআইসি) এবং থাইল্যান্ড ও সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক কনসোর্টিয়াম ‘সুগার ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি’র মধ্যে আলোচনা চলছে।

জানা গেছে, রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলোতে সম্ভাব্য বিনিয়োগের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৪ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এর মধ্যে ৭০ শতাংশ হবে ঋণ এবং অবশিষ্ট ৩০ শতাংশ ইক্যুইটি বিনিয়োগ। ৭০ শতাংশ ঋণের ক্ষেত্রে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা জাপানের জেবিআইসি ব্যাংক এবং থাইল্যান্ডের এক্সিম ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করবে। ৭০ শতাংশ ঋণ ও ৩০ শতাংশ ইক্যুইটি বিনিয়োগের পুরোটাই সরকারকে জামানত দিতে চায় কনসোর্টিয়াম। এমতাবস্থায় সরকারের কাছে বিনিয়োগের পুরো অর্থের সভরেন গ্যারান্টি চায় বিনিয়োগকারীরা।

এ বিষয়ে বিনিয়োগকারীদের প্রতিনিধিরা বলছেন, জাপাননের জেবিআইসি ব্যাংক ও থাইল্যান্ডের এক্সিম ব্যাংকের পলিসি হচ্ছে, বাংলাদেশে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে বিধায় সরকারকে সভরেন গ্যারান্টি প্রদান করতে হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, প্রকল্পটি সরকার-টু-সরকার (জি-টিু-জি) না হওয়ায় সভরেন গ্যারান্টি প্রদানের সুযোগ নেই। বিকল্প হিসেবে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে ব্যাংক গ্যারান্টি প্রদান করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে কনসোর্টিয়াম সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে জামানত হিসেবে অর্থ প্রদান করতে পারে। বাংলাদেশ সরকারের সভরেন গ্যারান্টির পরিবর্তে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর গ্যারান্টির বিনিময়ে জাপানের জেবিআইসি ব্যাংক ও থাইল্যান্ডের এক্সিম ব্যাংক সংশ্লিষ্ট প্রকল্পে ঋণ দেবে কি নাÑ এ বিষয়ে মতামত জানার জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দুই ব্যাংককে চিঠি পাঠানো হবে।

সূত্র মতে, এ ধরনের প্রকল্পে ব্যাংক গ্যারান্টি প্রদানে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কোনো সমস্যা হবে না। কারণ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ব্যাংক এভাবেই ঋণ দিয়ে থাকে। অন্য দিকে যেহেতু বিনিয়োগটি ব্যাংকের কাছে জামানত হিসেবে থাকবে সেহেতু প্রকল্পে লোকসান হলেও ব্যাংক অর্থ হস্তগত করতে পারবে। এছাড়া প্রকল্পে বিএসএফআইসির শেয়ার রয়েছে, যা ব্যাংকগুলোর জন্য বাড়তি সুবিধা।

এদিকে এ সংক্রান্ত শিল্প মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠক সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে বিএসএফআইসির কাছে রাষ্ট্রায়ত্ত চারটি ব্যাংকের (সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী) সুদসহ বকেয়া পাওনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে সাত হাজার ৯৪৬ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। এ ঋণের বিপরীতে অর্থ বিভাগ কর্তৃক প্রদত্ত ব্যাংক গ্যারান্টির মেয়াদ ২০১৮ সালে শেষ হয়ে গেছে। এমতাবস্থায় বিএসএফআইসি-কে ব্যাংকের সমুদয় পাওনা হয় পরিশোধ করতে হবে, নতুবা অর্থ বিভাগ কর্তৃক ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়াতে হবে। সময়সীমা বাড়ানোর বিষয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একাধিকবার অর্থ বিভাগে চিঠি দেয়া হলেও এ ব্যাপারে অর্থ বিভাগ কোনো সাড়া দেয়নি বলে জানা যায়। অর্থ বিভাগ সময়সীমা বাড়ালে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো বিএসএফআইসিসহ কনসোর্টিয়ামকে নিজ নিজ ক্রেডিট পলিসি অনুযায়ী ব্যাংক গ্যারান্টি প্রদান করতে পারবে বলে শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়।

এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি আমরা যাচাইবাছাই করে দেখব। তারপর এ নিয়ে আমাদের মতামত শিল্প মন্ত্রণালয়কে জানিয়ে দেয়া হবে। এখন আমরা সবাই বাজেট নিয়ে ব্যস্ত।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877